নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে পুর্ব ঘটনার জেরে গভীর রাতে মেসে হামলা চালিয়ে ববি’র ১১ শিক্ষার্থীকে আহত করেছে শ্রমিকরা। এঘটনায় পুনরায় মহাসড়ক অবরোধসহ গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নীসংযোগ করেছে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা, কুয়াকাটা, বাউফলসহ অভ্যন্তরীন সড়কের সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।সড়কের দুই প্রান্তের প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাস যাত্রীদের পাশাপাশি স্থানীয়রা।
অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে রুপাতলী বাসটার্মিনাল সংলগ্ন এলাকায় ‘বিআরটিসি বাস কাউন্টার স্টাফ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত এবং অপর এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিতর ঘটনায় দুপুর থেকে দুই ঘন্টা সড়ক অবরোধ এবং কাউন্টার ভাংচুর করে শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ বিআরটিসি কাউন্টারের স্টাফ রফিককে আটক করে। ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান তামাল। সে রুপাতলী হাউজিং এলাকায় একটি মেস বাসায় থাকেন।ওই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ায় বুধবার রাত ১টার দিকে তমালের মেসে হামলা করে কতিপয় শ্রমিক। বিষয়টি তাৎক্ষনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন সহপাঠী তমালকে উদ্ধারে ছুটে আসলে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে শ্রমিকরা। এসময় কুপিয়ে এবং পিটিয়ে ১১ শিক্ষার্থীকে আহত করা হয়।
এতে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এস.এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, সামাজ বিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানি ও ক্রপ সাইন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ আহত হন। ওই রাতেই তাদেরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।এর প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ওই সড়কে সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় সড়কের দুই প্রান্তে যানবাহনের ধীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এতে সড়কের রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ এবং অপরপ্রান্ত দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।এর আগে ‘সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা অতিক্রমকালে একটি যাত্রীবাহী বাসে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ভাংচুর করে শিক্ষার্থীরা।
এরপর সকাল সোয়া ১১টার দিকে ওই গাড়িটিতে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। একই সাথে কয়েকটি আলফা মাহেন্দ্রাতেও ভাংচুর ও অগ্নীসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে দীর্ঘ যানজট থাকায় বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত বাসটির আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে পৌঁছতে পারেনি।খবর পেয়ে সকাল থেকেই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তবে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস জানিয়েছে, ‘রাতে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলৈ ছুটে যান তিনিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ। আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
তবে শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাবার কথা জানিয়েছে।এঘটনায় বরিশাল-পটুয়াখালী মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি কাউছার হোসেন শিপন বলেন, এ অঞ্চলে চলাচলরত সরকার পরিচালিত বিআরটিসি কতৃপক্ষের সাথে রুপাতলী বাস মালিক সমিতির অন্তদন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিনের। যা সকলের কাছে স্পস্ট। অপরদিকে ববি শিক্ষার্থীদের সাথে ঝামেলা হয়েছে বিআরটিসি স্টাফদের সাথে। এ ঘটনায় আমাদের কোন রকম সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। এরপরেও শিক্ষার্থীরা আমাদের গাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নীসংযোগ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।একই অভিযোগ করেছেন বরিশার জেলা বাস-মিনিবাস, পরিবহন ও মাইক্রোবাস শ্রমিন ইউনিয়নের নির্বাহী সম্পাদক মানিক।
তিনি বলেন, অসৌজন্য মুলক আচরন ও খামখেয়ালীপনার কারনে বিআর টিসি শ্রমিকদের সাথে আমাদের শ্রমিকদের দন্ধ রয়েছে। যেহেতু এ ঘটনার সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই তাই আমাদের গাড়ি চলতে না দেয়ারও কোন কারন নেই।এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার জের ধরে সড়ক অবরোধ এবং একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি তাদের সড়ক অভরোধ তুলে নেয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের সাথে আলোচনা চলছে। শিঘ্রই এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান হবে বলে আশাবাদী পুলিশের এই কর্মকর্তা।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply